জীবনের শেষ বিসিএসে কাঙ্ক্ষিত পুলিশ ক্যাডার হলেন মিজানুর রহমান!
ঢাকা বিশ্ব;বিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছাত্র হিসেবে ক্লাসের শেষ তিন-চারজনের মধ্যে আমি এক’জন ছিলাম। যতগুলো BCS দিয়েছি, সব*গুলোতে পুলিশ ক্যাডারই ছিল আমার ১ম পছন্দ। ৩৬তম বিসিএসে অংশ নিয়ে মৎস্য ক্যাডারে সুপারিশ*প্রাপ্ত হয়েছিলাম। কিন্তু যোগ দেওয়ার আগেই চলে আসে ৩৭তম বিসিএস। বয়স;সীমার হিসেবে এটাই ছিল জীবনের শেষবার বিসিএসের সুযোগ।
কাঙ্ক্ষিত পুলিশ ক্যাডা’রের আশায় এই বিসিএসেও অংশ নিই এবং সফল হই। বিসিএসের প্রথম ধাপ প্রিলি;মিনারিকে আমার কাছে সব’চেয়ে সহজ ধাপ মনে হয়েছে। এই ধাপের প্রস্তুতি-তে খুব বেশি পরি’কল্পনা করিনি, শুধু নিয়মিত পড়া’শোনা চালিয়ে গেছি। প্রচলিত BCS প্রস্তুতির বই ও DIGEST’র পাশা’পাশি অতিরিক্ত প্রস্তুতির জন্য ৭ম, ৮ম ও নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ের লেখক পরিচিতি অংশটুকু এবং বাংলা*দেশ ও বিশ্ব’পরিচয় বইগুলো দেখেছি। পাশা*পাশি দৈনিক পত্রিকা পড়েছি।
এবার আসি লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। এই ধাপটিকে আমার কাছে কঠিন মনে হয়েছে। কারণ Syllebus অনেক বড়। পড়া শুরু করার আগে Syllebus-টা ভালোভাবে পড়ে নিয়েছি। যখন যে বিষয়-টি পড়তাম, তখনই সেই বিষয়ে Syllebus-এ কী কী আছে, দেখে নিতাম। কারণ সিলেবাসের বাইরে খুব একটা আসে না, তাই সিলেবাসের বাইরে কোনো কিছু পড়ে সময় নষ্ট করতে চাইনি। অনেকেই সিলেবাস না জেনেই বাছ-বিচার ছাড়া সব পড়তে থাকেন, এটি ভুল কৌশল।
কী পড়ব বা কতটুকু পড়ব, তার জন্য ওই টপিকের ওপর Syllebus’র মার্কস কত, সেদিকে খেয়াল রেখেছি। যেমন—সংবিধান খুবই গুরুত্ব*পূর্ণ টপিক। সংবিধানের ধারা’গুলো ইচ্ছা করলেই যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে বা রচনায় উল্লেখ করা যায়। প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ৩০ মিনিট সংবিধান নিয়ে পড়াশোনা করেছি।
অনুবাদও গুরুত্বপূর্ণ। অনুবাদে ভালো করার জন্য ৯ম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব;পরিচয় বইটির ইংরেজি সংস্করণ সংগ্রহ করে বাংলা সংস্কর’ণের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়মিত চর্চা করতাম। কাজটি খুব বোরিং, তবে নিয়’মিত করতে পারলে অব’শ্যই ভালো ফল পাবেন। অনেকেই বাংলা ও ইংলিশ রচনার ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রস্তুতি না নিয়েই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ভালো নম্বর পেতে হলে অবশ্যই তথ্য-উপাত্ত সংবলিত ভালো মানের রচনা লিখতে হবে। রচনায় অনেক নম্বর থাকে; ভালো’ভাবে লিখতে পারলে ভালো নম্বরও তোলা যায়।
BCS Written পরীক্ষায় ঘুরে-ফিরে কিছু কমন রচ’নাই আসে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত বিষয় নিয়েও রচনা আসতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকের ওপর বেশ কিছু বাংলা ও English রচনা নিজেই নোট করে ফেলে;ছিলাম। এ ক্ষেত্রে Preliminary’র পড়াশোনা বেশ কাজে দিয়েছে। যেমন ‘নারীর ক্ষমতায়ণ’ নিয়ে রচনা নোট করার সময় নারী-বিষয়ক প্রিলিমিনারি-তে যা যা পড়া হয়েছিল, তার মোটামুটি সব কিছুই এই রচনায় লিখে নিয়েছিলাম। ফলে রচনাটি হয়ে ওঠে তথ্য;সমৃদ্ধ; মুখস্থ করারও ঝামেলা থাকে না।
এক দিনে প্রচুর গণিত অনুশীলন না করে প্রতিদিন এক ঘণ্টার মতো অল্প অল্প করে অনুশীলন করার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। গণিতের জন্য মাধ্যমিক গণিত ও উচ্চতর গণিতের যে অংশটুকু রিটেনের সিলেবাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য*পূর্ণ, ঠিক ততটুকুই অনুশীলন করতাম। বিজ্ঞানের জন্য মাধ্যমিক বিজ্ঞান বইয়ের প্রাসঙ্গিক অংশটুকু ভালোভাবে দেখে নিয়েছিলাম।
বাংলা সাহিত্যের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় Preliminary’র বাংলা সাহিত্যের অংশ’টুকু পড়ে নেওয়ায় তা পরে কাজে দিয়েছে। নিয়’মিত পত্রিকা পড়া আর চলমান গুরুত্বপূর্ণ টপিকের ওপর প্রকাশিত খুঁটিনাটি বিষয় পয়েন্ট আকারে নোট করে রাখতাম।
একটি কমন বিষয়ে অনেকেই পরা,মর্শ চান, সেটি হচ্ছে ৫-১০ নম্বরের প্রশ্ন কত পেজ লিখতে হবে? খুবই বোকার মতো একটি প্রশ্ন। সব সময় মনে রাখা উচিত, আপনি কত*টুকু লিখছেন, সেটি গুরুত্ব;পূর্ণ নয়; বরং আপনি কী লিখ’ছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং লেখার কোয়ালিটির দিকে নজর দিন, পৃষ্ঠার সংখ্যার দিকে নয়। সব সময় ঘড়ি ধরে লেখার চেষ্টা করতাম। প্রতিটি নম্বরের জন্য কত সময় পাব তা প্রত্যেক পরীক্ষার একে’বারে শুরুতেই হিসাব করে সে অনুযায়ী লেখার চেষ্টা করেছি। BCS Written পরীক্ষার আগে আগে একটি ভালো কোচিং সেন্টারে শুধু Model Test দিয়েছিলাম, যাতে ঘড়ি ধরে লেখার বাস্তব অনুশীলনটা রপ্ত হয়।
লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর অনেক উৎকণ্ঠা আর ভয় নিয়ে VIVA দিতে গিয়েছিলাম। মনে মনে চাচ্ছিলাম, যাতে নির্দিষ্ট এক স্যারের বোর্ডে অন্তত না পড়ি। ঘটনাচক্রে আমার ভাইভা ঠিক সেই স্যারের বোর্ডেই পড়ল। বোর্ডে ছয়-সাত মিনিটের মতো ছিলাম। কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাব, আশা করিনি। কিন্তু সৌভাগ্য*ক্রমে প্রথম পছন্দ পুলিশ ক্যাডারে ১৮তম স্থান অর্জন করেছি।