জাতীয়নতুন

টিউশনি করে সংসার চালানো মহিত বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হয়ে স্বপ্ন পূরন করলেন।

মোঃ মহিতুল ইসলাম সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে র‌্যাবে কর্মরত আছেন। বাবা মোঃ আলতাফ হোসেন, মা শামসুন্নাহার। তিনি ১৯৬৮ সালের ১৮ অক্টোবর বরিশালের বাবুগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বায়েজিদ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি জাগো নিউজের সাথে তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প শেয়ার করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ সাইদ মাহাদী সেকেন্দারঃ

### আপনার শৈশব কেমন ছিল?
মোঃ মহিতুল ইসলাম: আমার একটা চমৎকার শৈশব ছিল। যেহেতু আমার বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে অনেক জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেতবুনিয়া, বারোবুনিয়া, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম এলাকায় পাহাড় ও নদী বেষ্টিত এলাকায়।

### পড়াশোনায় কোনো বাধা ছিল কি?
মোঃ মহিতুল ইসলাম: আমি ক্লাসে পড়ার পর থেকেই আমার পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। তখন আমার বাবা চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন। আর সেই ব্যবসা বেশ লোকসানের। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এরপর থেকে আমার পড়ালেখায় অনেক বাধা আসে। আমার এখনও কলেজের কঠিন দুটি বছর মনে আছে। এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই টিউশনি শুরু করি। কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বাবা স্ট্রোকে মারা যান। তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বাকি সময় টিউশনি পড়তে হয়েছে। আমার মা ও দুই ভাই বোনকে আবার দেখতে হলো।

### কবে থেকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছেন?
মোঃ মহিতুল ইসলাম: আমার অনেক আগে থেকেই সিনিয়র পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। যেহেতু আমার বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। তাই আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুলিশি পরিবেশে। কিন্তু আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন আমার স্বপ্ন আরও ডালপালা মেলে। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন বিসিএস ক্যাডার হব।
### শুনতে চাই বিসিএস যাত্রার গল্প—
মোঃ মহিতুল ইসলাম: আমার বিসিএস যাত্রার গল্প অন্য অনেকের মতো মসৃণ ছিল না। বোঝাই যাচ্ছে, যেহেতু টিউশনি করে সংসার চালাতে হয়েছে। স্বপ্ন দেখা প্রায়শই একটু বেশি মনে হয়। তবুও স্বপ্ন দেখেছি, অনেক স্বপ্ন দেখেছি। তাই অনার্স পরীক্ষা শেষ করে পুরোদমে বিসিএসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলাম। আরও মোটিভেটেড হওয়ার জন্য দেশের বিখ্যাত কিছু বিসিএস ক্যাডারদের পত্রিকা কেটে ফেসবুকে লিখতাম, তাদের অনুপ্রেরণামূলক * কথাগুলো পড়তাম এবং দেয়ালে বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দিতাম।

বিসিএস কোচিং করার জন্য অর্থের অভাবে বিভিন্ন বিসিএস কোচের ফ্রি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতাম। আর যারা সেখানে বক্তৃতা দিতে আসতেন তাদের সব বিসিএস ক্যাডারদের কথাই শুনতাম। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। আমার প্রথম বিসিএস এবং প্রথম চাকরির পরীক্ষা ছিল ৩৩তম বিসিএস। সেই বিসিএস থেকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার হিসেবে জাতীয় সংসদের সচিবালয়ে কমিটি অফিসার পদে চাকরি পাই। দেড় বছর ধরে কাজটি করেছি। এ ছাড়া বিসিএসের প্রস্তুতির সময় বিভিন্ন ব্যাংকে বেশ কিছু চাকরি পেয়েছি। নন-ক্যাডার চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে আমি প্রায় পাঁচ মাস একটি ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। তবে অন্যান্য চাকরি করতে গিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন মরেনি। লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হইনি।

আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং একই সাথে প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। ফলে ৩৪তম বিসিএসের মাধ্যমে আমার অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, যেটা আমার প্রথম পছন্দ ছিল সেটাই পেয়েছি।
### কতজন বিসিএস ক্যাডার আছে?
মোঃ মহিতুল ইসলাম: আমি 34তম বিসিএসের মাধ্যমে 1 জুন, 2016 তারিখে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদান করি। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাবে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছি।

### আপনি কি কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
মোঃ মহিতুল ইসলাম: আসলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বিশেষ করে যখন আমার বাবা সেখানে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের দেখতেন; তখন আমিও তাদের মতো হতে চেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, আমার এমন কিছু থাকতে হবে যাতে আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। এছাড়া কিছু বিসিএস ক্যাডারের কথা শুনলে, তাদের লেখা পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার অনুপ্রেরণা পেতাম।

একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মোঃ মহিতুল ইসলাম: সততা ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। আমি এমন কিছু করতে চাই যাতে সাধারণ মানুষের কাছে একজন পুলিশ হিসেবে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারি।
তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ 24 (জুন 26, 2020)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button