অর্থনীতিজাতীয়

দীর্ঘ ৩৩ মাস পর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে করোনার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার

করোনার প্রাদুর্ভাব শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ায় ৩৩ মাস পর দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে খনির প্রধান গেটও খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার।

কয়লা খনি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ এই খনিতে করোনার বিধিনিষেধ জারি করে খনি কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে দেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সরকারিভাবে লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও কয়লা খনিতে বিধিনিষেধ ছিল। যেসব শ্রমিক বাড়ি থেকে আসবেন তারা ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এরপর তিন থেকে চারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর কাজে যোগদান করবেন। কাজে যোগদানের পর তিনি আর বাড়িতে যেতে পারবেন না। কয়লা খনির ভেতরেই রেস্ট হাউজে থাকবেন এবং তিন মাস পর ছুটি পাবেন। এরপর বাড়ি থেকে ফিরলে আবারও কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এমন নিয়ম করার ফলে শ্রমিকরা বেশ সমস্যায় পড়ছিলেন। তারা বাড়ি যেতে পারছিলেন না। এক রকম বন্দিদশার মধ্যে থেকেই কয়লা উত্তোলন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। অথচ আগে নিয়ম ছিল যে শ্রমিকরা খনিতে কাজে যোগদান করে আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাবেন।

সূত্র জানায়, বিশ্বে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি এই খনিতে চীন থেকে আসা তিন জন কর্মকর্তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়। এ সময় ৪৫০ জন শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়াও একই বছরের ৩০ জুলাই খনির ৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হন।

বড়পুকরিয়া শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জাকির হোসেন জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিধিনিষেধের জন্য খনির প্রধান গেট বন্ধ ছিল। বিশেষ নির্দেশনা ছাড়া এই গেট খোলা হতো না। কাজে যোগদান করতে গেলে ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হতো। পরিবার-পরিজনের সঙ্গেও দেখা করা যেত না। এই গেট বন্ধ রাখা ও বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্যও শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে, দাবি জানিয়েছে। অবশেষে শনিবার থেকে এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করায় শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব শূন্যের কোঠায় থাকায় শ্রমিকদের কাজের সুবিধার্থে চায়না কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই আগের মতো গেট খুলে রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button