ধর্ম

পবিত্র মাহে রমজান শ্রেষ্ঠ সময়

চাঁদের বারো মাসের মধ্যে পবিত্র রমজান মাস শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। এ মাসে কদরের মহিমান্বিত রাত। যে একটি রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। রমজান মাস রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক ক্ষমার এবং তৃতীয় দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও মুক্তির। এ মাসকে প্রিয় নবীর হাদিসে ধৈর্য ও সহ্যের মাসও বলা হয়েছে।

মুসলিম উম্মাহ মাসের প্রতিটি দিনে দিনে ও রাতে তারাবি ও তাহাজ্জুদ রোজা পালন করে। রমজান মাসে মুসলিম নর-নারী অনেক আমল করে থাকে। তবে এ মাসের প্রধান সময় হলো রোজা। আমাদের এখন থেকেই সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি নিতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে চাঁদ উদিত হওয়ার পর দোয়া করতেন, হে আল্লাহ আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন, আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। তিনি দুই মাস আগে রমজানের নামাজ পড়তেন, যা থেকে রমজান মাসের গুরুত্ব বোঝা যায়। রমজানের রোজা প্রত্যেক সুস্থ, সবল, সক্ষম ও প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর ফরজ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার। [সূরা বাকারা, আয়াত: 183] রমজানে রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়ার ফজিলত পাওয়া যায়। রমজানুল মোবারক হল তাকওয়া ও ধৈর্যের গুণাবলী অর্জনের সময়।

ইসলামে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত জিকির এবং অন্যান্য অনেক অনুশীলন রয়েছে। তবে এই সমস্ত সময়কালে, জপমালার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্য কোন উপাসনায় উপবাস বলে কিছু নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়, রোজা ছাড়া, রোযার সওয়াব অন্যান্য আমলের সওয়াবের মতো নয়। রোজা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব। কারণ রোজা আমার সন্তুষ্টির জন্য খাবার এবং মনের সমস্ত চাহিদা পরিহার করে। [বুখারী ও মুসলিম]

এ হাদিসে দেখা যায়, প্রতিটি আমলের সওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। রোজার সওয়াবের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন হিসাব, ​​আল্লাহ তায়ালা রোজা কত গুণ বাড়ানো হবে তা না বলেই ঘোষণা করেছেন- ‘রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ সুবহানাল্লাহ।

‘আমার জন্য রোজা’ মানে কি? প্রতিটি কাজই আল্লাহর জন্য, তাহলে আল্লাহ কেন এভাবে আলাদা করে রোজা বললেন? অন্য সব কালের সঙ্গে তুলনা করলেই এর রহস্য বোঝা যায়। রোজা মানে মনের সকল কামনা-বাসনা ও রিপুর তাড়না থেকে বিরত থাকা। রোজাদারদের হালালের পাশাপাশি সব হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকতে হবে। মজাদার সুস্বাদু খাবার এবং পানীয় এবং অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজন থেকে আপনাকে সময়ে সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেহরি থেকে শুরু করে ইফতার পর্যন্ত এতদিন আত্মনিয়ন্ত্রিত অন্য কোনো ইবাদত নেই।

হজের ইহরাম বাঁধার পরও কিছু জিনিস ত্যাগ করতে হয়, কিন্তু তারপর খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করার বিধান নেই। নামাযে খাওয়া-দাওয়াও হারাম কিন্তু তা অল্প সময়ের জন্য। মনের যাবতীয় কামনা-বাসনা এভাবেই বিসর্জন দিতে হয় শুধুমাত্র উপবাসেই। মনের চাহিদা মেটাতে পারাটা ছোট কথা নয়। রোজাদার ব্যক্তি পার্থিব লাভের জন্য নয়, শুধুমাত্র মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য এভাবে পানাহার থেকে বিরত থাকে। প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণার্ত মানুষ এক ফোঁটা পানিও পান করে না। মুখে একটা দানাও ফেলতে পারি না। রোজার এই বৈশিষ্ট্যটি সত্যিই অনন্য। তাই আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য…

তাছাড়া অন্য সব আমলে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা নষ্ট হতে পারে, রোজায় আন্তরিকতা হারানোর কোনো সুযোগ নেই। নামায পড়ার সময় যদি কেউ মনে মনে ভাবে- লোকে তাকে দেখে আমাকে নামাজী বলবে- তাহলে তার নামায হবে না। রোজা রেখে কেউ লোক দেখানো যাবে না। সিয়াম সাধনায় আত্মপ্রকাশের সুযোগ নেই। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে রোজা ভাঙতে পারতেন, গোপনে এক গ্লাস পানি পান করলে পৃথিবীর কেউ জানবে না। রোজা রেখে কেউ মুনাফিক হতে পারে না। নামাযের পর হজ করে মুনাফেকী করা যায় কিন্তু রোযা হল বিশুদ্ধ ও প্রামাণিক আমল। তাই মহান আল্লাহ বলেছেন, রোজা শুধু আমার জন্য, আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব। সত্য, রমজানের রোজা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

কিন্তু রোজা শুধু না খাওয়ার নামই নয়। অনেকে মনে করেন রোজা রাখলে রোজা হয়ে যায়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। রমজান মাসে যখন হালাল খাবার হারাম হয়ে গেছে, তখন হারাম জিনিস থেকে দূরে থাকা কতটা জরুরী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন, ‘অনেক রোজা না রাখলে কিছুই অর্জিত হয় না।’

প্রতিনিয়ত আল্লাহর কত নিয়ামত আমরা ভোগ করি, কখনও নিয়ামতগুলোর কদর করি না। এক লোকমা খাবার বা এক গ্লাস পানির কী মূল্য তা কি আমরা কখনও বোঝার চেষ্টা করি? রমজানে রোজা রেখে প্রতিটি ফোটা পানি ও প্রতিটি দানা খাবারের মূল্য কিছুটা হলেও অনুধাবনের সুযোগ তৈরি হয়। সংযমের শিক্ষা লাভ হয়, সবর ও ধৈর্যের অনুশীলন হয় মাসব্যাপী। এমন অজস্র উপকারিতা রয়েছে সিয়াম সাধনায়।

দু’দিন বাদেই শুরু হচ্ছে রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজানুল মুবারক। পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দরভাবে সিয়াম সাধনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button