পরের জমিতে কাজ করেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন, আজ আলামিন বিসিএস ক্যাডার!
আলামিন খান নেত্রকোনা সদর উপ-জেলার আমতলা ইউনিয়নের শিব-প্রসাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অভাবের কারণে বাবার সঙ্গে পাশের জমিতে কৃষিকাজ করতেন। এসএসসি পর্যন্ত সকালে মাঠে যেতেন, গুরুর জন্য ঘাস কাটতেন তারপর স্কুলে যেতেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন ছিল যে বিলা সীতা পড়তে এবং লিখতে চেয়েছিলেন। কারণ, দুই বেলার খাবারেই চলে জীবন সংগ্রাম।
তবে ছেলের লেখা-পড়ার আগ্রহ দেখে মা তাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু প্রথম শ্রেণিতে সবাইকে পেছনে ফেলে বার্ষিক পরীক্ষায় ১ম হয়েছেন আলামিন। মা তখন ছেলের লেখাপড়া চালানোর জন্য একটি এনজিও থেকে টাকা ধার নেন।
আলামিন বলেন, ‘আমি দেখেছি প্রথমে বাবা-মা খুব খুশি ছিলেন। আমার প্রথম হওয়ার ইচ্ছা তীব্র হয়ে উঠল। আমি ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত প্রতিবারই প্রথম ছিলাম এবং প্রথমবার আমার বাবা-মাকে শুভেচ্ছা জানাতে পেরে আমি খুশি হয়েছিলাম। ‘
আলামিন সারারাত জেগে থাকে লেখা পড়ে। মা বললেন, ‘বাবা, একটু ঘুমাও।’ কিন্তু আলা মাইনার পড়াশোনা বন্ধ করেনি। ২০০৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পুরো কেন্দ্রে শুধু আলামিন জিপিএ-৫ পায়। অন্যরা উচ্চ বিদ্যালয়ের বই দিয়েছেন।
নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন। তারপর আরও তিন ভাই-বোন স্কুলে। ছেলের লেখা পড়ার খরচ মেটাতে তার মা শেষ গয়নাটি বিক্রি করে দেন। খবর জেনে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে আলামিন।
তিনি একটি ব্যাংক থেকে বৃত্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রতি মাসে 1,500। আর্থিক অনটনের কারণে তিনি স্কুল জীবনে শুধু সবজি ও ডাল দিয়ে ভাত খেতেন। কিন্তু সারাক্ষণ পড়তেন। প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক। তারপর বিসিএস দিল। ৩৫তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানকারী প্রভাষক এখন আলামিন।