প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হন ইশরাত জাহান!
সুলতানা ইশরাত জাহান একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। বাবা কায়সার আলম, মা হোসনে-আরা। তার স্বামীর নাম সাইদ নাসিরুল্লাহ। তিনি ১৯৬৬ সালের ০৮ আগস্ট খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে শৈশব কেটেছে বিভিন্ন এলাকায়। কলারোয়া বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি.
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্সে অনার্স এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্যে এমএ। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে নিজের স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প শেয়ার করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হাসান-
* আপনার শৈশব ও কৈশোর কেমন ছিল?
সুলতানা ইশরাত জাহান: বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। সবার শৈশবের মতো আমার শৈশবও কেটেছে নির্মল আনন্দে। আমার শৈশব ছিল অবিশ্বাস্যভাবে সুন্দর এবং আনন্দময়। খেলাধুলা আর দুষ্টু স্বভাবের কারণে এলাকায় সুনাম (!) যথেষ্ট ছিল। তবে মায়ের কারণে সেই সুনাম বেশিদিন টেকেনি। বাবা আর মা পড়ালেখা নিয়ে
তিনি কখনো চাপ দেননি, আবার কখনো দেননি। তবে আমাকে খুব রুটিন লাইফ ফলো করতে হয়। সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা সবই ছিল খুব নিয়মিত। অদম্য শৈশব কাটে পড়ার নিয়মে খেলাধুলা বা টিভি দেখতে দেখতে। আমি মফস্বল শহরে এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য এবং গ্রামীণ জীবনের আশ্চর্যজনক সরলতায় বড় হয়েছি। ফলে আমি একটি চমৎকার শৈশব পেয়েছি।
* নারী হিসেবে পড়াশোনায় কোনো বাধা ছিল কি?
সুলতানা ইশরাত জাহান: আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে ‘পড়তে’ কখনো আর্থিক বা পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। মা চেয়েছিলেন মেয়েদের সাথে এমন আচরণ করতে যাতে তারা কোনোভাবেই ছেলেদের থেকে নিকৃষ্ট না হয়। পিতামাতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাদের সন্তানকে মানবিক গুণাবলী ও উচ্চশিক্ষার সমন্বয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আমি সবসময় তাদের কাছ থেকে পড়ার এবং সহযোগিতার জন্য একটি চমৎকার পরিবেশ পেয়েছি।
* কোন ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন?
সুলতানা ইশরাত জাহান: সত্যি বলতে, বিসিএস ক্যাডার হব এমন স্বপ্ন কখনোই দেখিনি। আমি যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি; তখন নন-মেডিকেল হিসেবে চান্স পাওয়া খুব কঠিন ছিল। আমি আমার এমপিএইচ শেষ করে আইসিডিডিআরবিতে যোগ দিতে চেয়েছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল গবেষক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ যখন পেয়েছি; তারপর বিসিএস রেজাল্ট দিল। আসলে আমার মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট। আর মাস্টার্স থিসিস জমা দেওয়ার পর আইসিডিডিআরবি থেকে ফোন পেলাম।
* বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই-
সুলতানা ইশরাত জাহান: আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আমাকে বিসিএস পরীক্ষা দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। এমনকি তারা আমার বিসিএস পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করে। অনার্স ফাইনালের পর একটা বিসিএস বই কিনে বন্ধুদের সাথে দেখা করার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। কিন্তু মাস্টার্সে ভর্তির পর একাডেমিক পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মাস্টার্সের সময় আমি ৩৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিই কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই
আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে আছি। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হওয়ায় বেসিক সব বিষয়েই মোটামুটি ভালো ছিল। মাস্টার্স পরীক্ষায় বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মাস্টার্সের থিসিস পেপার জমা দেওয়ার দুদিন পর ৩৩তম বিসিএসের রেজাল্ট বের হলো এবং প্রথম পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে ক্যাডার হয়ে গেলাম।
* আপনি কেন পুলিশ ক্যাডার বেছে নিলেন এবং কাজের চ্যালেঞ্জ শুনতে চান-
* সুলতানা ইশরাত জাহান: পুলিশকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। কারণ এখনো আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এই পর্যায়ে মেয়েদের দেখতে অভ্যস্ত নয়। সর্দারের এক বছরের ট্রেনিং খুবই কঠিন ছিল। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ছাড়া পুলিশের মতো পেশায় আসা সম্ভব নয়। ট্রেনিং শেষ করে
মূল চ্যালেঞ্জ বুঝুন। সময় গড়ানোর সাথে সাথে আমি ইউনিফর্মে ডিউটি করার সময় লোকে বৃথা জড়ো হতো। কারণ তারা মেয়েদের ইউনিফর্মে দেখতে অভ্যস্ত নয়। আবার কাজের ধরনও আলাদা। কাজের সময় নেই। যে কোন সময় যে কোন কাজের জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা এবং মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা পুলিশের পেশার প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
অনেক কাজ করতে হবে। সিভিল সার্ভিসের অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে এটি হয় না। তাই অবশ্যই এই কাজটি অন্যান্য চাকরির চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সারাজীবন আমি ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমি গতানুগতিক জীবন পছন্দ করি না। তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আসেন।
একজন নারী হিসেবে পুলিশকে মূল্যায়ন করার সুযোগ আছে কি?
সুলতানা ইশরাত জাহান: একেবারেই না। কারণ সময়ের সাথে সাথে এটি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নারী অপরাধীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এ ছাড়া মাদক, চোরাচালান ও সাইবার অপরাধের মামলায় নারী অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে নারী ও শিশুর ওপর ভিন্ন ভিন্ন অবিচার
বা অপ;রাধের শিকার (নারী ও শি’শু নি’র্যা’ত;ন দমন আইন ২০০০ সংশোধন ২০০৩); তারা একজন নারীর সামনে বা কাছে যতটা সাবলীল ভাবে তার অভিযোগ বলতে পারবে, তা কখনোই একজন পুরুষ অফিসারের সামনে বলতে পারবে না। তাই পুলিশে নারীদের কাজের সুযোগ অনেক বেশি এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে।
প্রিয় বাংলাদেশ নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
সুলতানা ইশরাত জাহান: আমি প্রচণ্ড আশাবাদী মানুষ। দেশ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আমি সত্যিই আমার দেশকে অনন্য উচ্চতায় দেখতে চাই। ক্ষুধামুক্ত, দরিদ্রমুক্ত এক সমাজব্যবস্থা; যেখানে প্রতিটি নারী নির্ভয়ে পথ চলতে পারবে। যে দেশের মাটিতে আর কোনো নারী বা শিশু ধর্ষণের শিকার হবে না।