সম্পাদকীয়

রান্না করে মাসে লাখ টাকা আয় করছে এসএসসি পরীক্ষার্থী সেজান!

সেজান ইসলাম, এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. পড়াশোনার পাশাপাশি রান্নাও করে। বিভিন্ন খাবার তৈরি করে। এটি অনলাইনেও বিক্রি হয়। তার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে রান্নার রেসিপি দেয়। ইউটিউব থেকে মাসে 20 থেকে 25 হাজার টাকা। পাশাপাশি অনলাইনে রান্নার ক্লাস নেওয়া। সব মিলিয়ে রান্নার এই কাজ থেকে সেজানের মাসিক আয় প্রায় ১ লাখ টাকা।

ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাই স্কুলের ছাত্র। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পড়ালেখায় আপোষ না করে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রান্নার মাধ্যমে আয় করছেন তিনি। আয় মা রাখে। তার নিজের খরচ সহ অন্যান্য খরচ তার নিজের আয় দিয়েই চলে।

সেজান একটি খণ্ডকালীন চাকরি হিসাবে রান্নার কাজ গ্রহণ করেছে। কীভাবে রান্নার প্রতি আগ্রহী হলেন জানতে চাইলে সেজান হাসিমুখে বলেন, “ছোটবেলা থেকেই মাকে রান্না করতে দেখেছি। মাকে দেখেই রান্নার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। তারপরও আমি পড়তে বসব এই শর্তে। আমার মা আমাকে রান্না করতে দিতেন।

সেজানের মা নাহার সুলতানা। তিনি একসময় আইন পেশায় ছিলেন। এক পর্যায়ে একমাত্র ছেলের দেখাশোনার জন্য তিনি আইন পেশা ছেড়ে দেন। সেজানের বাবা ইস্কান্দার ভূঁইয়া। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন। তারা থাকেন রাজধানীর মিরপুরে।

ছেলেটির রান্না প্রসঙ্গে নাহার সুলতানা বলেন, “একমাত্র ছেলে। তাই সবাই তাকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে বলে আশা করে। কিন্তু ছেলেটির আগ্রহ রান্নাকে ঘিরে। তাই আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলে। তবে বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। আমি বলেছি। তাকে যে যাই করুক না কেন, তাকে কষ্ট করে পড়াশুনা করতে হবে।তারপর আরেকটি কাজ।সে আমাদের কথা শোনে।আমরা তাকে রান্না সহ অন্যান্য কাজে উৎসাহিত করি।

ছেলের কাজে গর্বিত মা নাহার সুলতানা। “এই বয়সী অনেক ছেলে সারাক্ষণ ফেসবুকে থাকে,” তিনি বলেন। আমাদের ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করছে তা না করে। আমাদের খরচ তাকে দিতে হবে না। সে আয়ের টাকা নষ্ট করে না। এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়। ”

মিরপুরে সেজানের বাসা ভিন্ন ‘পরিবার’। এটি একটি পৃথক রেফ্রিজারেটর। তার রান্নার জন্য ডিম, চিনি, ময়দা, আলু সহ সবকিছুই আলাদা। সেজানের ভাষায়, ‘এটা একটা ব্যবসা। তাই সবকিছু আলাদা রাখতে হবে। ‘

মায়ের রান্না সেজানের প্রিয়। টিভি-ইউটিউব দেখা, পড়াশোনা বা গবেষণার পাশাপাশি নিজের রান্নায় নিজের ‘পদ্ধতি’ প্রয়োগ করেন।

মা নাহার সুলতানা বলেন, ছেলের কাছ থেকে অনেক রান্না শিখেছেন।

সেজান বলেন, খাবার তৈরি করার পর চালক ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেন। একজন ডেলিভারি ম্যানও আছেন। সামনে পরীক্ষা থাকায় সেজান আগের মতো অর্ডার নেয় না। তিনি অর্ডার নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

সেজান মানুষের সাথে রান্না বা খাবারের রেসিপি ভাগ করে নিতে পছন্দ করেন। বসনিয়ান পরোটা, চিকেন পিৎজা, মাটন ট্যান, থিম কেক সহ পনির কেক, চারটি ডিমের বিশেষ 1 কেজি ভ্যানিলা কেক, হ্যালো কিটি কেক এবং ভিডিও ভিডিও সহ আরও অনেক রেসিপি সহ তার ইউটিউব চ্যানেলে (‘সেজানের রান্নাঘর’) যান।

তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে অতিথি এলে কী করতে হবে, কেকে ছবি দেওয়ার কৌশল, ফ্রিজ কীভাবে পরিষ্কার করতে হবে, কম খরচে কেক বানাতে হলে কী কী জানতে হবে ইত্যাদি শিখিয়েছেন সেজান। সেজান বলেন, “যদি সে কিছু করার চেষ্টা করার সময় ভুল করে, তবে সে তা তার ছাত্রদের দেখায়। যাতে তারা একই ভুল না করে।”

সেজান একটি বেসরকারি টেলিভিশনে রন্ধনসম্পর্কিত রিয়েলিটি শোতেও অভিনয় করেছেন। ‘অ্যারো লিটল শেফ সিজন 2’ নামের সেই প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম পাঁচজন প্রতিযোগীর একজন ছিলেন।

কোঁকড়া চুলের সেজানকে অনেকে ‘ছোট ভাই’ বলে ডাকে। বড় হয়ে একটি বিখ্যাত বেকারির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই ‘ছোট ভাই’। তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করতে চান।

@মনসুরা হোসেন (প্রথম আলো)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button