ধর্ম

সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ

সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ

সূরার নাম : ইখলাস
শ্রেণী : মাক্কী সূরা (মক্কায় অবতীর্ণ)
অন্য নাম : আল-তাওহীদ
নামের অর্থ : একত্ব
সূরার ক্রম : ১১২
আয়াতের সংখ্যা : ৪
রুকুর সংখ্যা : ১
পারার ক্রম : ৩০ পারা
শব্দ : ১৫
বর্ণ : ৪৭

 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অর্থঃ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

 

قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ

উচ্চারণঃ কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ্

অর্থঃ  বলুন, তিনি আল্লাহ, এক

اللَّـهُ الصَّمَدُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুচ্ছমাদ্

অর্থঃ  আল্লাহ অমুখাপেক্ষী

 

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

উচ্চারণঃ লাম্ ইয়ালিদ্ অলাম্ ইয়ূলাদ্

অর্থঃ  তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ‌

উচ্চারণঃ অলাম্ ইয়া কুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ্

অর্থঃ  এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

 

সূরা ইখলাস। এটি কুরআনুল কারীমের 112তম এবং সবচেয়ে ছোট সূরা। সূরা ইখলাস হল সেই সূরা যার মাধ্যমে মানুষ সর্বাধিক পুণ্য ও বরকত লাভ করে। আল্লাহর পরিচয় প্রকাশকারী 4টি আয়াত সম্বলিত ছোট সূরাটি হিজরতের আগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। সূরাটির নামের অর্থ এর ফজিলত, মর্যাদা এবং আশীর্বাদ প্রকাশ করে।

সূরা পাঠের উচ্চারণ, অর্থ, মর্যাদা ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-

قُلْ هُوَ اللَّهُ َحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ – وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا حَحَدٌ
উচ্চারণঃ কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা. লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ। (মাখরাজসহ শুদ্ধ উচ্চারণ শেখা জরুরি)
অর্থ: (হে রাসূল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক। ঈশ্বর স্বয়ংসম্পূর্ণ. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)

সূরাটির নাম ‘ইখলাস’। যার অর্থ- ভক্তি, দৃঢ় বিশ্বাস, ভক্তিপূজা। ইখলাসের অর্থ হল সমস্ত জাগতিক বিশ্বাস থেকে মুক্ত হওয়া এবং একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদে প্রকৃত বিশ্বাসী হওয়া।

সূরার নামকরণ
সূরাটির প্রকৃত অর্থের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরায় মহান আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এই সূরা মানুষকে নির্দিষ্ট কিছু শিরক থেকে মুক্তি দেয় এবং সে একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে একজন আন্তরিক বান্দা হয়ে ওঠে।

সূরার বৈশিষ্ট্য
সূরাটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শেখানো ভাষায় তার পরিচয় তুলে ধরেছেন। স্বয়ং আল্লাহ এই সূরাটি নাযিল করেছেন পরিচয় দেখানোর জন্য। এর মত আর কোন সূরা আল্লাহর একত্বের সাথে সম্পর্কিত নয়। এই সূরায় আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যের সমাধান করা হয়েছে।

সূরা নাযিলের কারণ
– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘খায়বার থেকে কিছু ইহুদি একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে এসে বলল- হে আবুল কাসিম! আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে, আদমকে মাটি থেকে এবং জমিনকে পানির ফেনা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনার প্রভু সম্পর্কে বলুন, তিনি কোন বস্তু থেকে উদ্ভূত হয়েছেন?
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন উত্তর দেননি। অতঃপর (তাদের জবাবে) হজরত জিব্রিল (আ.) সূরা ইখলাস নিয়ে হাজির হলেন।

– হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, একদিন নাজরানের সাতজন খ্রিস্টান যাজক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
‘আমাদের বল, কেমন আছে তোমার রব? সে কি দিয়ে তৈরি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার রব কোনো কিছু দিয়ে তৈরি নয়।’ তিনি সকল বস্তু থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সূরা ইখলাস নাজিল করেন।

সূরা ইখলাসের বিষয়বস্তু

তার পরিচয় প্রকাশের জন্য আল্লাহ তাআলা সূরা ইখলাসের ৪টি আয়াতের মাধ্যমে ৪টি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এবং তারপর-
– সৃষ্টিকর্তা এক. এই আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে তাঁর একত্ববাদ ঘোষণা করেছেন।
– সে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই আয়াতে তিনি কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন। তাকে কারো প্রয়োজন নেই। সবকিছুতেই তিনি যথেষ্ট।
– তার জন্ম-সৃষ্টিতে কারো হাত নেই। তিনি কারো পিতা নন এবং কেউ তাকে জন্ম দেননি। তিনি জন্ম ও সৃষ্টি থেকে পবিত্র ও মুক্ত।
– জন্মের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই এবং চতুর্থ আয়াতে যেমন বলা হয়েছে, তিনি অতুলনীয়। চারটি আয়াতের মূল বিষয়বস্তু হল তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
– তার সমান নেই। অর্থাৎ তিনিই এক এবং একমাত্র পরম শক্তি। তাকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে তার কোনো সমকক্ষ নেই।

সূরার মর্যাদা

সূরা ইখলাস একটি সংক্ষিপ্ত সূরা যার 4টি আয়াত রয়েছে যার একটি অনন্য মর্যাদা রয়েছে। সূরাকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
– হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে রাতে বারবার সূরা ইখলাস পড়তে শুনল। সকালে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নজরে আসে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সেই সত্তার কসম! যার অলৌকিক হাত আমার প্রাণ। অবশ্য এই সূরাটি কুরআন মাজিদের এক তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুওয়াত্তা মালিক)

আরও পড়ুনঃ মাক্কী সূরা কয়টি ?

– রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবাকে বললেন, তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে পারবে? সাহাবীরা এই প্রস্তাবকে খুব কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলেন, আমাদের মধ্যে কে এই কাজ করতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারী, নাসাঈ)
– হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ কুরআনকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। আর এই সূরাটি (সূরা ইখলাস) একটি অংশ হয়ে গেছে। (মুসলিম, তিরমিযী)
হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের তিনটি সূরার কথা বলছি, যেগুলো তাওরাত, ইঞ্জিল, যবুর ও কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস না পড়া পর্যন্ত রাতে ঘুমাতে যাবেন না। ওকবা বললেন, সেদিনের পর থেকে আমি কখনোই এই প্রথা পরিত্যাগ করিনি। (তাফসির ইবনে কাসীর)

সূরা ইখলাসের ফজিলত

সূরা ইখলাসের অর্থ ও তাৎপর্য বোঝা গেলে বান্দার অন্তরে আল্লাহর গুণাবলী গেঁথে যাবে। আমার মনে সেই ব্যক্তি এমন ব্যক্তি হয়ে যাবে যে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে। আর এর বিনিময়ে সে দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক উপকার ও পুণ্য পাবে।

আল্লাহর ভালবাসা অর্জন

জনৈক যোদ্ধা জামাআতে নামাজ পড়ার সময় সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে সৈন্যরা বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানায়। তিনি তাদের বললেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসা করুন কেন তিনি এমন করলেন। তখন সেনাপতি বললেন, আমি এই সূরাটিকে ভালোবাসি কারণ এতে আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। একথা জানার পর রাসূল (সা.) সাহাবীদের বললেন, যাও তাকে বলে দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালবাসেন। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

 জান্নাত লাভ করুন

একবার এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সূরা ইখলাস ভালোবাসি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ “(বুখারী, তিরমিযী)

পাপ থেকে মুক্তি

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে 200 বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে তার 50 বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না। (তিরমিযী)

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি

হজরত সাহল ইবনে সাদ সায়্যিদ (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করলে তিনি বললেন, ‘যখন তুমি বাড়িতে যাবে, তাকে সালাম দেবে এবং একবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে। এই কাজ করার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তার দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে। (তাফসিরে কুরতুবী)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করবে, তা তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট।’ (ইবনে কাসির)

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সূরা ইখলাস পাঠ করতে শুনেছেন। তিনি বললেন, ‘এটি তার অধিকার।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার অধিকার কী? তিনি উত্তরে বললেন, জান্নাত তার অধিকার। (মুসনাদে আহমাদ)

উল্লেখ্য, অনেকে বলেন, সূরা ইখলাস ৩ বার পড়লে পুরো কোরআন তেলাওয়াত বা কোরআন খতম করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। হাদিসের কোথাও ছওয়াব পাওয়ার বা পুরো কোরআন খতম করার কোনো উল্লেখ নেই।

পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি এই সূরার অর্থ বুঝতে পারে এবং আল্লাহর বিশেষ গুণাবলীকে হৃদয়ে ধারণ করে সে আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাসী হিসাবে বেড়ে উঠবে। সে হবে প্রকৃত মুমিন। আল্লাহর দরবারে এসব গুণের প্রতি বিশ্বাস তাকে মর্যাদাবান করে তুলবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ধীরে ধীরে সূরা ইখলাসের অর্থ ও তাৎপর্যের প্রতি ঈমান আনার তাওফীক দান করুন। আল্লাহর একত্ব ও ক্ষমতার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। হাদীসে ঘোষিত মর্যাদা ও ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button