সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ ও ফজিলত

সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ ও ফজিলত
সূরা আল ফাতেহা পবিত্র কোরআনের প্রথম সূরা। আয়াত সাতটি। মক্কায় অবতীর্ণ। ‘ফাতিহা’ শব্দের অর্থ শুরু, আরম্ভ, উদ্বোধন, উদঘাটন প্রভৃতি।
কুরআনের 114টি সূরার মধ্যে প্রথমটি হল সূরা আল-ফাতিহা। এ কারণে সূরা ফাতিহাকে ‘ফাতিহাতুল কুরআন’ বা কুরআনের শুরু বলা হয়।
এই সূরার আরেকটি নাম হল “আলহামদুলিল্লাহ শরীফ”। সূরা ফাতিহার আরেকটি নাম হল “উম্মুল কুরআন” বা কুরআনের মা। পুরো কোরান শরীফের সারমর্ম সূরা ফাতিহায় রয়েছে বা পুরো কোরান শরীফ সূরা ফাতিহার ব্যাখ্যা। এ কারণেই এ সূরাকে কোরআনের জননী বলা হয়েছে।
এই সূরার অপর নাম “সাবু মাশানি”। অর্থাৎ এই সূরাটিতে সাতটি অনন্য বাণী বা আয়াত রয়েছে। একে মাচানি বলা হয় কারণ এটি একবার মক্কায় এবং একবার মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল। আরও বিশুদ্ধভাবে, এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
আল্লামা ইবনে জারীর (রাঃ) হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা ফাতিহা অর্থ আলহামদুল শরীফ, উম্মুল কুরআন, ফাতিহাতুল কিতাব, সাবুমাছানী।
এই সূরার অপর নাম “সুরায়ে কাঞ্জ” (ধন)। ইসহাক ইবনে রাওয়াহা হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এ সূরাটি আরশের নিচের ভান্ডার থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।
সূরা আল ফাতিহা, পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল, তাই এটি একটি মক্কী সূরা। 8 নম্বর আয়াত এবং ধনুক নম্বর 1। ফাতিহা শব্দের অর্থ শুরু করা। যার সাহায্যে কোন বিষয়, বই বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে ফাতিহা বলে।
নামকরণ
ফাতিহা শব্দটি আরবি শব্দ “ফাথুন” থেকে এসেছে যার অর্থ “মুক্তি”। এই সূরার আরও কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন- ফাতিহাতুল কিতাব, উম্মুল কিতাব, সুরাতুল-হামদ, সুরাতুস-সালাত, আস-সাবিউল মাসানী।
শানে নুযুল
সূরা আল ফাতিহা, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। আগে নাযিল হওয়া আয়াতগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন।
সূরা আল ফাতিহা একটি বিশেষ সূরা। কারণ পবিত্র কোরান এই সূরা দিয়ে শুরু হয়েছে এবং মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত এই সূরা দিয়েই শুরু হয়েছে।
সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ , আলহামদুলিল্লাহ সূরার অর্থ :
আসুন জেনে নিই এই সূরার
বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম।
অনুবাদ : শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন।
অনুবাদ : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ : আররহমা-নির রাহি-ম।
অনুবাদ : যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
উচ্চারণ : মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।
অনুবাদ : বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
উচ্চারণ : ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন
অনুবাদ : আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
উচ্চারণ : ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম
অনুবাদ : আমাদের সরল পথ দেখাও।
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারণ : সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।
অনুবাদ : সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মাহে রমজানের ক্যালেন্ডার ২০২২ – মাহে রমজান ২০২২ সময়সূচী
সূরা আল-ফাতিহার বৈশিষ্ট্য:
1) সূরা ফাতিহা কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, কুরআন এই কিতাবের তুলনা আর কোনো সূরা নেই। (বুখারী, মিশকাতঃ ২১৪২)
2) সূরা আল ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত আল্লাহর প্রেরিত বিশেষ আলো যা এর আগে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। (মুসলিম শরীফ : ৬০৬)
৩) যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পড়েনি তার ছালাত অসম্পূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনবার একথা বললেন। (মিশকাত : ৬২৩)
4) আবু সাঈদ খুদরী রা. তিনি বলেন, একবার আমাদের এক সফরে আমাদের এক সঙ্গী জনৈক গোত্রের কাছে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করে সাপের বিষ ফুঁক দিলে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। (বুখারী শরীফঃ ৫৪০৫)
সূরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হল আল্লাহ তায়ালা নিজের ও বান্দাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। তা ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছিহত। সূরা ইখলাছে ‘তাওহীদ’ সম্পূর্ণ অস্তিত্বের কারণে কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরা ফাতিহায় তিনটি জিনিসের সমন্বয়ের কারণে এটিকে ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার সর্বোচ্চ মর্যাদায় ধন্য করা হয়েছে। (তাফসিরে কুরতুবী : ১৪৬)
সূরা ফাতিহার ফজিলত:
সূরা ফাতিহার ফজিলত অসীম। এর ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ: –
১) আবু হুরায়রা রা. বললেন রাসূল সা. তিনি বললেন, সূরা ফাতিহা পড়। বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন সে বলে, আর-রাহমা-নির রাহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার ফজিলত বর্ণনা করেছে।
বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, ইয়াকানা’বুদু ওয়া ইয়া কানাস্তাইন, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যেকার ব্যাপার। তাই আমার বান্দার জন্য আছে যা সে চায়।
বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এগুলো আমার বান্দাদের জন্য। তাই আমার বান্দার জন্য আছে যা সে চায়। (মুসলিম শরীফ : ৩৯৫)
2) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একবার জিব্রাইল (আঃ) নবী (সাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিব্রাইল (আঃ) উপর থেকে আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি আকাশের এমন একটি দরজা যা আগে কখনো খোলা হয়নি।
দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, ‘তোমাকে যে দুটি জ্যোতি দেওয়া হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি তার সুসংবাদ নিন। এগুলি হল সূরা আল ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত। (মুসলিম শরীফ : ৬০৬)
3) উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তাওরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে মূল কোরআনের মতো কিছুই অবতীর্ণ করেননি।” এটাকে বলা হয় ‘আস-সাবুল মাছানী’ (সাত আয়াত বারবার আবৃত্তি করা) যা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য সে যা চায় তাই আছে। (নাসাঈ শরীফ : ৩১৯)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সূরা ফাতিহা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমীন!