১৫০ টাকায় মাছ চাষ শুরু করে এখন কোটিপতি স্বপন!
২০০১ সালে বাবার মৃত্যুর পর নিয়ামুল হক স্বপন পথ হারিয়ে ফেলেন। মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এখন তিনি কোটি টাকার মালিক।
অহনা অন্তর বহুমুখী খামারের মালিক নিয়ামুল হক স্বপন মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেন। সব খরচ বাদে খামার থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। তিনি খামারা পুকুর পাড়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন।
এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলদ ও বনজ গাছ। খামারের তত্ত্বাবধায়কদের জন্য থাকার ব্যবস্থা এবং মাছ চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
নিয়ামুল হক স্বপন রাজবাড়ী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মৃত কোমর উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে স্বপন সবার বড়। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। এছাড়া তার ভাই পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত।
জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পর ২০০১ সালে পকেটে মাত্র দেড়শ টাকা নিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করেন স্বপন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মাছ চাষে আগ্রহী ছিলেন। সেই আলোয় সে তার বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে
দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্র *পুরের খোলা বিলে বর্ষাকালে তিনি তার ৩০ শতাংশ জমির আশেপাশে দেশীয় প্রজাতির মাছ রাখতেন এবং কিছু কার্প মাছ চাষের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেন। এভাবে কয়েক বছর মাছ চাষ করে বেশ সফলতা পান তিনি।
পরে ওই জমিতে একটি পুকুর কেটে একইভাবে মাছ চাষ করতে থাকেন। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি খামার থেকে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আয় করেন।
একে একে তিনি প্রায় ১২ বিঘা কৃষি জমি কিনেছেন। সেখানে তিনি শুকনো মৌসুমে ধান ও বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করেন। এছাড়াও তিনি পুকুর পাড়ে বিভিন্ন ধরনের অ-বিষাক্ত সবজি চাষ করেন। এছাড়াও রয়েছে বন-ফলের গাছ, খামারের তত্ত্বাবধায়কদের কোয়ার্টার এবং মাছ চাষীদের প্রশিক্ষণের জায়গা।
চারটি পুকুর আলাদা করে রেখে কার্প মাছ চাষ করেন স্বপন; এছাড়া পুকুরের একপাশে দুটি মুরগি ফেলে রেখেছেন। যাতে প্রায় চার হাজার মুরগি পালন করা হয়। স্বপনের সাথে ছেলে অন্তর ও দুই কেয়ারটেকার খামার দেখাশোনা করে। তার ভাইও সহযোগিতা করেছেন।
প্রতিবেশীরা বলেন, “প্রায় ২০ বছর ধরে মাছ চাষ করছেন স্বপন। প্রথমে বিলে মাছ চাষ শুরু করেন। এখন অনেক পুকুর বানিয়ে ফেলেছেন।
তারও প্রচুর জমি রয়েছে। স্বপ্ন দেখে এলাকায় মাছ চাষে সফল হয়েছেন অনেকেই।
সফল মৎস্য চাষী নিয়ামুল হক স্বপন বলেন, বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় সবকিছু চাপে পড়ে সংসার চালাবেন বুঝতে পারছিলেন না।
তখন মনে পড়ে মাছ চাষের কথা। কিন্তু তার পকেটে ছিল মাত্র 150 টাকা এবং বিলের 30 শতাংশ জমি। ওই জমির আশেপাশে দেড়শ টাকা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার ছেলে ও ছোট ভাই তার সাথে যোগ দেয়। মাছ চাষের আয় দিয়ে তিনি বেশি জমি কিনেছেন। ”
এখন তার চারটি পুকুর ও ১২ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে অফিস কক্ষ, স্টাফ কোয়ার্টার, মুরগির চালা ও গাছ লাগানো হয়েছে। খামার থেকে এখন বছরে প্রায় ২৪ লাখ টাকা
মাছ সহ জিনিসপত্র বিক্রি করে। এই টাকার অর্ধেক হল ১২ লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে তিনি অন্যান্য সম্পদ তৈরি করেছেন।
তিনি জানান, এসব দেখে আশপাশের অনেক বেকার যুবক তার সাথে বিভিন্ন সহযোগিতায় এখন বড় পুকুরের মালিক হয়েছেন। এলাকায় এ ধরনের ৮ থেকে ১০টি খামার রয়েছে।
নিয়ামুল হক স্বপন বলেন, আমি রাজবাড়ী ও কুমারখালী মাছের খামার থেকে রেনু পোনা সংগ্রহ করি খামারের জন্য। এটি পুকুরে বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রয়যোগ্য হয়ে ওঠে।
বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মাছ চাষিদের সহযোগিতায় পুকুর থেকে মাছ ধরে রাজবাড়ির আঙিনায় বিক্রি করি।
টাকার প্রয়োজন হলে পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করি। তাই মাছ চাষকে খারাপ সময়ের বন্ধু মনে করেন তিনি।
* মাছ চাষ করতে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মাছ চাষ শুরু করার পর থেকে আমরা কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। বরং এলাকাবাসীসহ মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেয়েছি। এ কারণে আমার পুকুরে কখনো মাছের রোগবালাই হয়নি। ”
নিয়ামুল হক স্বপন বলেন, মাছ চাষ যদি এমন ব্যবসা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ক্ষতি নেই। যারা বেকার এবং টাকা কম তারা একটি ছোট পুকুর ইজারা দিন
অল্প পরিসরে মাছ চাষ শুরু করলে সফলতা পাবেন। বর্তমানে সরকারও মাছ চাষীদের অনেক সহায়তা দিচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, “স্বপন একজন প্রকৃত মাছ চাষী। করোনার সময় তিনি প্রান্তিক পর্যায়ে মাছ উৎপাদন অব্যাহত রাখেন।
একজন সফল মাছ চাষী হিসেবে নিজ উদ্যোগে মাছ চাষ শুরু করেন
উদাহরণ সেট করুন। তাকে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার দক্ষতার কারণেই তিনি আজ এই অবস্থানে এসেছেন।
স্বপ্নের খামার দেখে উৎসাহিত হয়ে এলাকার অনেক বেকার যুবক এখন মাছ চাষ করছেন। তারা সফল হয়েছে।